এবার চোখ আন্দামানে
বন্ধু আদানির জন্যে মোদীজির নতুন টার্গেট এবার কোটি কোটি বছর প্রাচীন আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। উন্নয়নের নামে সেখানে গাছ কাটা হতে পারে দেড় কোটিরও বেশি। বরাদ্দ প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা। ২০২১ সালে মোদী সরকারের নীতি আয়োগ ‘দ্য গ্রেট নিকোবর প্রজেক্ট’ নামে মঞ্জুরী দিলেও বিশ্বব্যাপী পরিবেশবিদদের সমলোচনার মুখে তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত হয়ে ছিল প্রকল্পটি। এবার গালভরা ‘নিউ হংকং প্রজেক্ট’ নাম দিয়ে রূপায়নের চেষ্টা চলছে সেই প্রকল্পটির। দেখানো হচ্ছে হংকং বন্দরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবে 'দ্য গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ড' প্রজেক্ট। তৈরি হবে টাউনশিপ, গড়ে উঠবে পর্যটন হাব, বাড়বে আন্তসামুদ্রিক যোগাযোগ, ফলত এই বন্দরের মুনাফা গিয়ে পৌঁছবে হিন্দুস্তানের ঘরে ঘরে। তার জন্য আন্দামানীয় ইকো-সিস্টেম, জীবজগত,প্রাণীজগৎ ধ্বংস হলে হবে। আর এখন মোদানুগ্রহে মুকেশ অম্বানীর ’ভ্যানতারা’ তো রয়েইছে, সেখানে নাহয় পাঠিয়ে দেওয়া যাবে আন্দামানের বিরলতম লেদারব্যাক সী টার্টেল, হক্সবিল টার্টেল, গ্রীন টার্টেল, ও অলিভ রিডলে প্রজাতির কচ্ছপদের। যাদের গোটা পৃথিবীর অন্য কোথাও প্রায় খুঁজেই পাওয়া যায় না। এই প্রকল্প হলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে গোটা পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বেঁচে থাকা 'শম্পেন' উপজাতির ২২৯ জন আদিবাসী। সঙ্গে ২৯ হাজারের আশেপাশে 'নিকোবরী' উপজাতির মানুষরাও হারবে তাদের ঘর, ধ্বংস হবে তাদের সুপ্রাচীন সভ্যতা। আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে তাল না মেলাতে পারলে তারা সবাই শেষ পর্যন্ত পড়বে অস্তিত্বের সংকটে। আন্দামান হল ভারতের ইকোলজিক্যাল হটস্পট, যেখানে বিরল প্রজাতির লেদারব্যাক কচ্ছপ, নিকোবর মেগাপোড, সল্টওয়াটার কুমির, প্রবালপ্রাচীর রয়েছে। আদিবাসীদের সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার জীবজগৎও হারাবে তাদের বাসস্থান। এখন টিম মোদীজি বলছেন, এখান থেকে কাটা বনানঞ্চলের ক্ষতিপূরণ হিসেবে মধ্যপ্রদেশ এবং হরিয়ানায় গাছ লাগানো হবে, তৈরী করা হবে বনাঞ্চল। কিন্তু মধ্যপ্রদেশে, হরিয়ানায় তো আন্দামানের বিশাল প্রবালপ্রাচীর (যা নিশ্চিন্হন হয়ে যাবে এই প্রকল্প হলে) তৈরী করা সম্ভব নয়। গৌতম আদানী তেল তুলতে পারে, প্রবালপ্রাচীর নয়। তাছাড়া সম্প্রতি আসামে বন্ধুবর আদানির জন্যে দশ লক্ষ গাছ কাটার সময় জনগণের কোটি কোটি টাকা খরচে মোদিজির ‘এক পেড় মা কি নাম’ -এর মিথ্যা ক্যাম্পেইন এই সদ্য দেখে উঠল দেশবাসী । আন্দামানের এই বিশাল অঞ্চলটি ভারতীয় ন্যায়সংহিতার 'সিআরজেড-ওয়ান-এ' আইনের আওতায় পড়ে। যেখানে ম্যানগ্রোভ, কচ্ছপ, কোরেল এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর অবাধ বিচরণ। আইন অনুযায়ী এখানে কোনোভাবেই সামুদ্রিক বন্দর তৈরী করা যায়না। কিন্তু “মোদী হ্যা তো মুমকিন হে” রাতারাতি পুরো অঞ্চলটিকে বদলে বানিয়ে দেওয়া হল 'সিআরজেড-ওয়ান-বি', ব্যাস নাম বদলের সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নের নামে জীববৈচিত্র ধ্বংসের মেগা প্ল্যান! দ্বীপটি 'সিসমিক জোন-ভি' এর আওতায় পড়ে, সুতরাং এই বিরাট গাছ কাটার ফলে বাড়তে পারে আরও বেশি ভূমিকম্পের ঝুঁকি। ২০০৪ সালের সুনামির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। এছাড়াও ২০১১ সালের সেন্সাস বলছে আন্দামানে প্রায় এক লাখের বেশি বাঙালি থাকে। যারা মূলত বাংলাদেশ থেকে যাওয়া উদ্বাস্তু হিন্দু মানুষ। তারা কি ফের উদ্বাস্তু হবেন ? সে বিষয়ে তথ্য বাংলাদেশের হিন্দুদের নিয়ে ভাবিত “মোদী কা বাচ্চা”রা দেবেন নিশ্চয়। বরাবরের মতোই বিজেপি সরকার এই প্রকল্পের সঙ্গে ন্যাশনাল সিকিউরিটির প্রসঙ্গ জুড়ে দিয়েছে। কিন্তু তাহলে পর্যটন কেন্দ্র কেন? মানে ধরুন বাঙালি কোনো এক দুর্গাপুজোয় খোলা হওয়ার প্যাকেজে সিয়াচেন ঘুরতে যাচ্ছে তেমন তো হয়না? তেলেঙ্গানায় কংগ্রেস,আসাম-আন্দামানে বিজেপি- গাছ কাটাই যেন সরকারের কাজ। যেন আদিবাসী জীবন সরিয়ে তাদের সো-কল্ড “স্বাভাবিক” জনজীবনে ফেরানোই সরকারের কাজ। দু-পাঁচ হাজার ভোটে মোটেই যায় আসেনা গণতন্ত্রের। আর কচ্ছপ তো ভোট দিতেও যায়না। তাই মুখে কুলুপ সংবাদমাধ্যমের । বলিউড স্টাররাও চুপ। চুপ বিরোধী দলগুলি এবং সুযোগমত টু-পাইস কমিয়ে নেওয়া বুদ্ধিজীবীরাও। কিছু মানুষ বলছে, লিখছেও। কিন্তু তাই বলে বিকাশ তো আর থেমে থাকতে পারে না। দশ কোটি বছরের দ্বীপপুঞ্জটির আদিবাসী ও জীববৈচিত্রের ধ্বংসাবশেষের উপর জ্বল জ্বল করবে বন্ধুবর আদানীর সাফল্য।
আমার দেশ
দ্য স্ক্রল
6/23/20251 min read
