বর্তমান রসনার ইতিকথা
লোকে বেশ ভাত খাচ্ছিল। ডাল খাচ্ছিল। জুটলে মাছ খাচ্ছিল। কেউ কেউ ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিল। সুদখোর সুদ খাচ্ছিল। এরপর নিয়ম করে ঘুষ খাওয়া শুরু হলো। ঘুষে যে এত ভিটামিন তা জানা ছিলো না। গরীবের চেহারা ভেঙে যায় ভিটামিনের অভাবে, আর ঘুষখোরের জেল্লা বেড়ে যায়। শরীরটা বেশ চনমনে থাকে। তারপর এলো কমিশন খাওয়া। আহা! তার স্বাদই আলাদা। আগে বড় বড় কোম্পানি খেত। সরকার খেত। কিন্তু জনে জনে খেত না। একটা সময়ের পর এ হেন পুষ্টিকর খাদ্য ' আগে কেন খাইনি রে' বলে লোকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। আট লাখ টাকার কাজ, যে করলো সে পেলো আটশ টাকা, বাকি সাত লাখ নিরানব্বই হাজার দুই শত … আর যা হয়.......কমিশন। বসে বসে। এ হচ্ছে সুপার ভিটামিন। যারা খায় তাদের চেহারাই আলাদা। ত্বকে একটা গোলাপি ভাব এসে গেছে....... কিছু লোক কমিশন খেতে পারছিলো না। তারা গুরুর কাছে গিয়ে বললো - গুরু, কী করি? গুরু বললো - লুটে খা। ব্যস! শুরু হয়ে গেল কাটমানি খাওয়া। এও কমিশন জাতীয়। কিন্তু ঠিক কমিশন নয়। এ হচ্ছে হরলিক্স আর কমপ্ল্যানে তফাৎ। কাটমানিতে প্ল্যান করতে হচ্ছেনা। কমপ্ল্যান। কে বাড়ি করছে, মার শালাকে, আগে আমাদের পয়সা দে। কে দোকান করেছে, দে শালা পয়সা......কে মেলায় দোকান বেঁধেছে.....মাল দ্দে শালা...... কাটমানির ওপর বিটলবণ ছড়িয়ে দিলে হপ্তা হয়ে যায়। সেই ভীষণ টেস্টি হপ্তা এমন মুখে রুচে গেল যে তারা আর কিছু খায়ই না। এর মধ্যে কিছু লোক প্রোটিনের সন্ধানে বেরোল। শুধু ভিটামিনে কি শরীর ট্যাঁকে? প্রাণীজ প্রোটিন চাই। আর প্রোটিনের উৎস তো জানাই আছে। পা চাটো। চারদিকে কত পা। মালিকের পা, মাতব্বরের পা, কায়দাবাজের পা, নেতার পা, .......আহা চেটে সুখ। লজেন্স খাওয়ার মতন। খাবি পরে। আগে চেটেই অস্থির। আর সে কী প্রোটিন.....সে কী প্রোটিন। যারা চেটেছে তাদের চেহারাগুলো দেখলেই বুঝবেন। জমিদারের মতন একটা ভাব আসে চোখেমুখে। সবসময় পা না পাওয়া গেলে অসুবিধে নেই, জুতো, চটি, মোজা, গামবুট যা পাবে চেটে মেরে দাও। দধিভান্ড! দই নাই পেলে, ভাঁড় চাটলেও গায়ে লেগে আছে খানিক। এই সব খেতে খেতে যখন নিজেকে বেশ একটা সফল মনুষ্য বলে মনে হচ্ছে এবং যারা খায়নি তাদের নিতান্ত গরীব-দুখী, জীর্ণ- শীর্ণ বলে বোধ হচ্ছে, তখনই আসে সেই খাদ্য...... খাবি খাওয়া। খাবি এমন জিনিস, সে আর কী বলি, ক্ষীরের পায়েস, নলেন গুড়ের রসবড়া...... সে না খেয়ে উপায় নেই। সুতরাং খাব্বেই। আগেরগুলো খেয়ে তুমি উঠে যাবে, তা হবে না। শেষেরটাও খেতে হবে!
দ্য স্ক্রল
12/8/20251 min read
